December 22, 2024, 3:30 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
এনআইডি জালিয়াতি করে অন্যের জমি বিক্রয়ের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি কুষ্টিয়ায় কাজ করছে। ইতোমধ্যে তারা কুষ্টিয়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের বক্তব্য গ্রহণ করেছে। এটা অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ন সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস।
এ বিষয়ে কমিটির কারো সাথে কোন কথা বলা যায়নি। তবে একটি সুত্র জানাচ্ছে নির্বাচন অফিসে বড় ধরনের কোন ত্রæটি রয়েছে যার কারনে এ ধরনের ঘটনা সম্ভব হয়েছে। কিভাবে সমস্ত ঠিকানা পরিবর্তন করে এ ধরনের জালিয়াতি সম্ভব হলো এসব বিষয় খতিয়ে দেখ্েযছ তদন্ত কমিটি।
সূত্র আরও জানায়, এই ২২ শতাংশ জমির ভুয়া মালিক সেজে বিক্রি করে দেওয়ার পাশাপাশি এনএস রোডে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আবদুল ওয়াদুদের দোতলা বাড়িসহ প্রায় ১৭ কাঠা জমি একই কৌশলে বিক্রির চেষ্টা চালানো হয়। ওয়াদুদ ও তার পরিবারের অপর পাঁচ সদস্য এসব জমির প্রকৃত মালিক। জেলা নির্বাচন অফিসের সহায়তায় জালিয়াত চক্রটি ওই পরিবারের ছয় সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্রের নকল তৈরি করে। এভাবে জমির মালিক বনে যায়। পরে জমিটি বিক্রয়ও করা হয় মহিবুল নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথমে আইডি জাল সনাক্ত করে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মুল হোতা বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের আহবায়ক আশরাফুজ্জামান সুজকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় জমি ক্রেতা মহিবুলকে।
মহিবুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান ২০১৭ সালের শেষ দিকে হরিপুরের সাবেক মেম্বার হালিম উদ্দিন, মজমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আসাদুর রহমান বাবু, রাজু আহম্মেদ ও লাহিনী এলাকার জাহিদুল তার কাছে আসেন। তাদের সঙ্গে প্রথমবার কুষ্টিয়া পৌরসভার পুকুরপাড়ে সভা হয়। সেখানে তারা জমির বিষয়টি জানান। এরপর তাকে জমি দেখানো হয়।
জবানবন্দিতে মহিবুল আরও জানান, এর ১৫ দিন পর তারা আবার তার কাছে একই স্থানে আসেন। ওই দিন কাবিল নামের নতুন একজন আসেন। জমি কেনাবেচার বিষয়ে আলোচনা চললেও দামদরের বিষয়টি ঝুলে থাকে। এর পর একই স্থানে তৃতীয় সভা হলে যুবলীগ নেতা সুজন ও হাজি রবিউল ইসলাম যোগ দেন। এই সুজন হ্েযলা হাজি রবিউলের আত্মীয়। ওই সভা থেকে ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পরে তিনি (মহিবুল) তাতে রাজি হন। সেখানে হাজি রবিউল, সুজনসহ তাদের সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বসেই সব পরিকল্পনা করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, তার সব পরিকল্পনা করেন তারা। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ লাখ টাকা হাজি রবিউলকে দিতে হবে।
মহিবুল জবান বন্দিতে বলেন, জমি তার নামে রেজিস্ট্রি হলে তা আনুমানিক চার থেকে পাঁচ কোটি টাকায় বিক্রি করা হবে। ওই চক্রটি জানায়, তিনি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত পাবেন। এর পাশাপাশি এক কোটি টাকা তাকে লাভ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট টাকা সবাই ভাগাভাগি করে নেবেন। এর পর মামলার ১০ নম্বর আসামি মহিবুল (ব্যবসায়ী মহিবুলের অধীনে চাকরি করতেন) জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তার নামে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। তবে মালিকপক্ষ হয়ে জাহিদ ও আসাদুর রহমান বাবু ব্যবসায়ী মহিবুলের কাছ থেকে ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। এ ছাড়া চুক্তিমতো হাজি রবিউলকে ৩০ লাখ টাকা দেন এই ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী মহিবুল জবানবন্দিতে বলেন, ওই জমি তার নামে বায়নানামা করে নেন। এরপর তিনি তার নামে নাম খারিজের জন্য আবেদন করেন। ১০ নম্বর আসামি মহিবুল তার চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হালিম উদ্দিনকে ওই জমি দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করেন। জমির মূল মালিক মামলার বাদী ঘটনা টের পেয়ে নাম খারিজের বিপক্ষে আবেদন করলে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে বিষয়টি ফাঁস হয়।
জবানবন্দিতে মহিবুল আরও বলেন, জমি ১০ নম্বর আসামি মহিবুলের নামে রেজিস্ট্রি হওয়ার পর সম্প্রতি তিনি (১০ নম্বর আসামি) তার নামে দলিল করে দেন।
এ ঘটনায় ১৮ জনের নামে মামলা হয়েছে।
Leave a Reply